Monthly Archives: February 2021

মানুষের সব কথা বলা হয়ে গেছে

মানুষের সব কথা বলা হয়ে গেছে
উপালি শ্রমণ

মানুষের সব কথা বলা হয়ে গেছে,
দুঃখ, বেদনা, প্রেম ভালোবাসার,
সুখ, শান্তি, কামনা ও হিংসার,
সব কথা বলা হয়ে গেছে।
মেঘদূতের মতো বিচ্ছেদের হাহাকার
কে আর লিখবে?লেখার কি প্রয়োজন আছে?
মনের মানুষের জন্য যে ব্যাকুলতা
লালনের গানে সর্বত্র বিস্তৃত –
সে কথার পুনরুক্তি কে আর করবে?
কবিগুরুর শাশ্বত গানে হৃদয় সিক্ত হয় অবাধ প্রেমে
জীবনানন্দ দাস বাংলার নদী জল মাঠ ভালবেসে
অমরত্ব করেছেন দান,
বিদ্রোহ ও স্বাধীনতার ভাষা শেখালেন
কবি নজরুল, শামসুর রাহমান।
পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ কবিতাগুলো লেখা হয়ে গেছে
সহস্র বিচিত্র শব্দ নিরন্তর ভোগ করে –
সুপুষ্ট গ্রন্থাগারের অভিধান,
আর কোন নতুন শব্দজোটের ক্ষুধা নেই তার
তবুও প্রতি বসন্তে মনে হয় আমার
বাগানে এইবারই বুঝি প্রথম ফুল ফুটেছে,
মনে হয় কোকিলের ডাক আমি শুনি নি কোনোদিন আগে,
প্রত্যেক পূর্ণিমা চাঁদে আবার প্রশ্ন জাগে –
পূর্ণিমা চাঁদ কি কখনো পুরনো হবে?
মানুষের সব কথা আসলেই কি বলা হয়ে গেছে?
সেই কবে আদি মানব আর মানবী নিষিদ্ধ ফলটি খেয়েছিল বলে
মানুষের সকল ক্ষুধা কি মিটে গেছে?
(ফেব্রুয়ারি ২৬, ২০২১ )

প্রার্থনা ১২

আমার মতো যারা করছে অকুশল
দুঃখ ভাণ্ডার করিছে সঞ্চয়
ঘুরবে সংসারে না জানি কতো কাল
জাগে নি তবুও যে হৃদয়ে কোনো ভয়।
জাগে নি কিঞ্চিত বিরাগ চেতনাও,
বিষয় বাসনায় নিয়ত ডুবে রয়,
নজর রেখো যেন সুপথ ফিরে পায়
বিরাগ চেতনার জন্ম দ্রুত হয় ।
ধ্বংস হোক যত দালান হিংসার
নিত্য সাথী হোক মৈত্রী হৃদয়ের
দুঃখ হেতু যেন না হয়ে কেউ আর
সঙ্গী হোক সব অমল আনন্দে ।
(ফেব্রুয়ারি ২৫, ২০২১ )

অনলাইন অর্ডার

সকাল বেলায় দরজা খুলেই প্রথম দেখি
একটি চিঠি আসার কথা, আসে নি ।
দুপুর এবং সন্ধ্যাবেলায় উঁকি মারি
বেশ কয়েকবার,
সেই চিঠিটি আসেনি।
অন্য অনেক কিছু এলো,
সবজি এলো হরেক রকম,
নতুন একটি টোস্টার এলো,
কাঠবিড়ালির খাবার এলো,
তখনো সেই চিঠি শুধু আসেনি।
রাত হয়ে যায়, তখন ভাবি –
তাহলে কি ঠিকানা ভুল?
অথবা ভুল ডেলিভারি?
কাস্টমার সার্ভিসে সংযোগ মেলেনি।
(ফেব্রুয়ারি ২২, ২০২১ )

এক ভিখিরির গল্প

আমার চেনা এক ভিখিরির
ভিক্ষা করেই একটা জীবন কেটে গেছে,
থাকতো সে এক কুঁড়ে ঘরে,
বস্তি পাড়ায়,
তাঁর পাশে এক ছোট্ট নদী,
শহরের সব বর্জ্যগুলো রোজ ভেসে যায়,
সেই নদীতেই গোসল করে
দেহের ময়লা সাফ করে তার !
প্রায়ই যখন সাপ্লাই’র জল পায় না তারা
নদীর জলেই খাওয়া ধোয়ার কাজটি সারে
দিব্যি তাদের দিন চলে যায়
মোটামুটি সুস্থ সবল
কাজের কোনো টেনশনও নেই
কোনো একটা গলির পাশে বসে থাকলেই হয়ে গেলো
অল্প কিছু চাওয়া শুধু
ঠিক যেন এক প্রাচীন ঋষির কৃচ্ছ্র সাধন
অল্পতে যে তুষ্ট থাকে
তৃষ্ণাটিকে দমন করে ,
রাজ্য সুখ আর কি প্রয়োজন!
ব্যাঙ্ক ব্যালেন্সে নেই পরোয়া
সকাল বেলার উপার্জনই মিটিয়ে ফেলে সকল চাওয়া,
অল্প টাকা বেশী হলে
পাশের একটি মদের দোকান ঘুরে আসে
বিন্দাস এই জীবন ধারা…
তারও দেখি নাতি নাতনি
সংসার আছে ঘরটি ভরা
এমন করেই চলে যাবে ভিখিরিটির পরম্পরা?
কী সহজেই কেটে গেছে একটা জীবন
পৃথিবীতে ষাটটি বছর,
স্টীভ জবস তো ছাপ্পান্নতেই করেছিল মৃত্যু বরন।
(ফেব্রুয়ারি ২৩, ২০২১ )

কবিতার নিয়তি

কবি হবার ইচ্ছে করে পদ্য কি আর লেখা যায়?
কাব্য আসে মনের মাঝে হৃদয়ের এক তাড়নায়।
বাচ্চা কোকিল জানে কি আর সুমধুর এক কণ্ঠ পাবে?
বৃষ্টি ফোটা জানে কি শেষ কোন নদীতে মিশে যাবে?
আমের বোঁটা জানে না তাঁর মধ্যে কি টক বা স্বাদু আম,
শিশু মুজিব জানতো বিশ্বে কেমন হবে তার সুনাম?
কেউ জানে না জন্মকালে কেমন হবে তার গতি,
কবিতা কি জানে কবে তাঁর হবে শেষ বিরতি?
আমি তো নই রবীন্দ্রনাথ, ক’জন বা সেই ভাগ্য পায়,
দুঃখ সুখের সকল কথা লিখে রাখবে কবিতায়?
এই যে আমার পদ্য খাতায় ছন্দরা রোজ করে খেলা,
কবিতারা আমায় লেখে, সকাল দুপুর সন্ধ্যে বেলা।

(ফেব্রুয়ারি ২২, ২০২১ )

পরিত্যাক্ত

ঘুমের মাঝে স্বপ্নরাও আমায় কেন তাড়া করে?
কেন আমায় কেউ ডাকে না হাত বাড়িয়ে নিজের ঘরে?
কেন সবাই আমায় দেখে হঠাত করেই দূর চলে যায়?
স্বপ্ন দেখি স্বপ্নরাও ত্যাগ করেছে আজকে আমায়।
আমার কিছু বলার ছিল মনের কথা কেউ শুনে নি,
কিছু কথা শোনার ছিল ভালো মন্দ কেউ বলেনি,
আরো কিছু দেখার ছিল অপূর্ণ সব মনের দাবি,
দেখাবারও ছিল কিছু আমার অধিকারের চাবি ।
এমনি করেই সব কথা কি অব্যক্তই রয়ে যাবে?
একলা পথিক তাহলে কি মধ্যপথেই পথ হারাবে?
এমনি করেই স্বপ্ন বিহীন চোখগুলো কি ছোঁবে আকাশ?
আর কতকাল শুনতে হবে নিজের শুধু দীর্ঘ নিঃশ্বাস?

(ফেব্রুয়ারি ২২, ২০২১ )

প্রার্থনা ১১

নিজের মনো মাঝে জটিল বাধা যত,
নিয়ত আমাকে যে করিছে হয়রান,
শ্বাসও রোধ করে বেঁচেও যেন মৃত,
তাই তো আমি করি মুক্তি সন্ধান।
নিত্য সংকটে বুঝি না কি কারণে,
আমাকে হারানোর হৃদয়ে এতো ভয়,
আমি কি চিরকাল থাকবো এ ভুবনে?
সে কথা জানি তবু হৃদয়ে সংশয়!
অদেখা বেড়া এক আমার চারপাশে,
নিজের বেষ্টনে ঘুরবো কতকাল?
কি যেন পিছুটান প্রতিটি নিঃশ্বাসে,
সৃষ্টি করে মনে অশেষ জঞ্জাল?
তাই এ নিবেদন “জাগো হে ভোলা মন,
ঘুমিয়ে কতো আর করবে কাল পার?
তরী যে ডুবে যাবে, তীর কি করে পাবে?
মনের মোহ দ্রুত করো নিঃসংহার!”

নতুন মহাকাব্য

কোনো একদিন গল্পকারের বদল হবে,
গল্পটিও নতুন ভাবে, নতুন সুরে ব্যাক্ত হবে,
জানবে তখন কেমন ছিল
যশোধরার ছয়টি বছর
কেমন ছিল পুত্রবিহীন শুদ্ধোধন ও কপিলনগর,
যেই ছেলেটি কোনদিনই দেখেনি তাঁর পিতার মুখও,
কি খেলাতে মগ্ন ছিল,
জানবে তখন তারও খবর।
কেমন ছিল কুশ ও লবের দিনপঞ্জি নির্বাসনে,
জন্ম থেকেই বনবাসী ছিল যারা গভীর বনে,
জানতে পাবে কত রকম পুষ্প জীব ও পাখির ডাকে
তারা তখন খেলেছিল আগলে ধরে মা সীতাকে।
জানতে পাবে আরো কতো বিরল কথা
ইতিহাসের পারে পারে,
মহাকাব্য পাতায় যাদের
ঠাই মেলেনি সবিস্তারে।
(ফেব্রুয়ারি ২০, ২০২১ )

সত্য

১।
সত্য যাহা সত্য বলি,
সত্য নয়তো বলার মাঝে,
সত্য সে যে সত্য হবে,
নিত্য প্রমাণ করলে কাজে ।
২।
সত্য যে আজ চারিদিকে,
প্রাচীন ডাইনোসরের মতো,
বাঁচার জন্য আকুল তবু
বিলুপ্ত হয় অবিরত ।
(ফেব্রুয়ারি ১৭, ২০২১ )

একটি সাদা বেড়াল

আমার একটা বেড়াল ছিল, সাদা বেড়াল
হঠাত একদিন হাজির হলো,
সকাল বেলায়,
তেমন কোনো শব্দও নেই,
ভেতর আসার আবদারও নেই,
দ্বারের পাশে নিরবেই সে বসে ছিল, ছোট্ট বেড়াল।
সকাল বেলার নাস্তা হতে এক পিস রোটি দুধ মিশিয়ে যখন দিতাম,
চুপ করে সে খেয়ে নিত,
সারাটা দিন বাইরে থেকে সন্ধ্যে হলে ঘরে আসি,
তখনো সে থাকতো বসে দুয়ারটিকে আড়াল করে ,
আমায় দেখেই একটু নড়ে,
দু’চোখ তুলে একবার দেখে সেখানেই সে থাকতো বসে।
আমি ভাবি কেমন যে তাঁর নিবিষ্টতা,
এক আসনে বসে থাকার একটানা তাঁর সহিষ্ণুতা
প্রাচীন কোনো ঋষির মতন,
ক’মাস পরে হঠাতই সে কোথায় যেন চলে গেলো,
আর আসেনি,
সেই যে কবে বাড়ি ফিরেই দেখতে পেতাম একটি বেড়াল
আমার জন্য বসে আছে,
আর কোনো দিন কেউ ছিল না,
বাইরে কিম্বা ভেতর ঘরে
আমার অপেক্ষাতে বসে কেউ ছিল না…
(ফেব্রুয়ারি ১৮, ২০২১ )