Monthly Archives: January 2022

একত্ব

[এই কবিতাটি ভিয়েতনামের আধ্যাত্মিক গুরু  এবং কবি থিক ন্যাট হানের কবিতা “Oneness” এর অনুবাদ । ]

যে মুহূর্ত আমার মৃত্যু হবে,
তোমার কাছেই আবার ফিরে আসার চেষ্টা করবো আমি,
যতই দ্রুত সম্ভব হয় ।
বেশী সময় লাগবে না সে প্রতিজ্ঞা করছি তোমায় ।
এটাও কি সত্য নয় যে –
এখনো তো আমি আছি তোমার মাঝেই,
প্রতিটি ক্ষণ করি যখন মৃত্যু বরন?
তোমার কাছেই ফিরে আসি
প্রত্যেক বারই পুনঃ পুনঃ।
শুধুই দেখো,
অনুভবে পাবে আমার উপস্থিতি।
হঠাত তোমার কাঁদতে যদি ইচ্ছেও হয়,
কাঁদতে পারো।
তখন জেনো তোমার সাথে
কাঁদছি আমি।
তোমার চোখের অশ্রু পাতে
প্রশান্তি লাভ করবো দুজন।
তোমার অশ্রু আমারই তো।
যেই মাটিতে হাঁটছি আমি
ইতিহাসকেও সে অতিক্রম করে গেছে ।
বসন্ত শীত এক হয়ে যায় এই মুহূর্তে।
আমার পায়ে অমরত্ব ছুঁয়ে গেছে,
আমার দু’পা তোমারই তো।
এখন চলো হাঁটবো দু’জন।
একত্বকে করবো বরন
চেরি ফুলের মুকুল দেখবো শীত সকালে।
মৃত্যুর কথা কেনই বা আর বলতে হবে?
তোমার সংগে থাকতে হলে
মৃত্যুরও বা কি প্রয়োজন?

বিন্দু বিন্দু শূন্যতা

[এই কবিতাটি ভিয়েতনামের আধ্যাত্মিক গুরু  এবং কবি থিক ন্যাট হানের কবিতা “Drops of Emptiness” এর অনুবাদ । ]

বিন্দু বিন্দু শূন্যতায়
হৃদয় আমার শীতল হয়ে আসে।
হঠাত দেখি,
নৌকা আমার নদীটি পার হয়ে গেছে
বিরাগের তীর পৌঁছে গেছে
নরম বালু, শূন্য তটে
প্রাচীন প্রতিজ্ঞারা…

You have to come again

You have to come again,
to hear some new verses of Charyapada from me,
you will come, to the tune of a new flute,
in a silent forest of Lumbini.
When the blue sky of Kathmandu is full of dust
Please come with a bottle of clean water,
and make this promise once more with a gentle smile
that ”Everything will be fine,”
You have to come again,
to forgive the mistakes of this century.
You will bring a piece of ice from the chest of the Himalayas to
flood the water in the middle of my parched river.
You will come again – to unravel all the knots in the Indra’s net
in this house closed for a hundred years,
And then
to revive my dead sunflower with the touch of a drop of dew,
I know you will come once more.

পিপীলিকার প্রবৃত্তি

যেখানে নিষেধ –
মানুষেরও আগ্রহ নাকি সেখানেই সবচেয়ে বেশী,
শিশুর আগুন প্রীতি তাই –
হয়েছে প্রবাদ ।
আমারও উৎসাহ আজ –
নিষিদ্ধ সব বিষয়ে।
যে নদীর মনোহর জলের ভেতর –
লুকনো রয়েছে অবিচির ধাপ সরাসরি
তাঁর কৃষ্ণ জলে নিমজ্জিত হতে তীব্র বাসনা আমার।
গাছের ডালে ডালে পাতায় পাতায় ঘুরে ফেরে বিষাক্ত সাপ যে পাহাড়ে,
বুক যার ছেয়ে থাকে বিষময় আইভি লতা,
তার দেহে মুখ রেখে অন্তত একবার রাত্রি যাপন করতে ইচ্ছে করে।
আবার যখন পিপীলিকার প্রবৃত্তি ভর করে মনে –
জ্বলন্ত অগ্নিগিরির মাঝে ঝাপ দিতে ইচ্ছে হয় –
অনুভব করতে পারি যেন তাঁর গহিন গহ্বরে কি আছে ।
(মে ১০, ২০২২)

খেলা

খেলা

বিকেল বেলায় পাড়ার সকল ছেলে মাঠে বেঁধেছে দল,
কি খেলা আজ খেলবে তারা তাই নিয়ে হয় হট্টগোল।
ব্যাট হাতে কেউ বললো ক্রিকেট ফুটবল হাতে অন্যজন,
ভলিবল কেউ বললে হঠাত শোরগোল বড় হয় তখন ।
সবার উপর যুক্তি দিয়ে কেউ বলে কাল কি খেলেছে,
আজকে যে তার তাইতো টেনিস খেলার ভীষণ স্বাদ হয়েছে।
“ক্রিকেট খেলাই সর্বশ্রেষ্ট” বলে ওঠে আরেকজন,
“ফুটবলে ঘাম ছোটে বেশী ভালো থাকে দেহ-মন।”
এমন সকল যুক্তি ঝড়ে কেউবা বা হঠাৎ বলে ওঠে,
“বাস্কেট বলই খেললে কি হয় তাতে কি ঘাম কমই ছোটে?”
পশ্চিমে লাল সূর্য তখন ধীরে ডুবে বলছে “হায়,
এই খেলাটিই আগামীকাল আমি আরো দেখতে চাই।”
(জানুয়ারি ১০, ২০২২)

প্রার্থনা ১৭

মনের ঘরে ছাদ দেয়াল সব কিছু,
ধুলোয় ভরে গেছে কতো অবহেলায়,
অবাঞ্ছিত যত বর্জ্য সবখানে,
মুহূর্তেই কি সব হঠাৎ সাফ হবে?
যত্নে জঞ্জাল করেছি সঞ্চয়,
স্বর্গসুখ ভেবে নিয়েছি আশ্রয়,
এমন কেঁচো মন ময়লা প্রিয় যার,
শুদ্ধি কথা শুনে বিপদই মনে হয়।
হঠাৎ যদি কোনো স্বচ্ছ ঝর্ণায়
অমল জলে প্রাণ নিখুঁত স্বাদ পায়,
হৃদয়ে উচ্ছাস তখনই জেগে ওঠে,
তাৎক্ষনিক সব ধুয়ে সে নিতে চায়।
ধুলোর এ প্রলেপ গভীর যে ভীষণ,
অতীত পুরোটাই অকাজে গেছে ক্ষয়,
এখনি তাই ত্বরা মোছন শুরু করি,
যদি’বা শেষকালে কিছুটা শুচি হয় ।

বিজয়ের কথা

মেয়েটি সাঁজতে খুব ভালোবাসতো।
ছয় কি সাত বছর বয়স থেকেই,
পায়ে নূপুর, হাতে মেহেন্দি লাগিয়ে ঘুরে বেড়াতো।
পাড়ার দিদিরা তাঁর কপালে যখন –
একটি তারার লাল টিপ এঁকে দিতো –
ছুটে গিয়ে সে দাঁড়াত বাবার সামনে।
হাতের সব কাজ ফেলে বাবা বলতেন –
“আকাশের এই পরীটি কি ভুল করে এসে গেছে আমাদের ঘরে?”
এই কথা শুনে মুখ লাল করে ছুটে যেত সে খেলতে আবার বন্ধুদের সাথে।
স্কুলের বৈশাখী উৎসবে একবার হলুদ শাড়ী পরে নৃত্য প্রতিযোগিতায়-
জিতেছিল প্রথম পুরস্কারও,
এর পর এক সপ্তাহ সে শাড়ি ছাড়া অন্য কোন পোশাক পরে নি ।
তাঁর পিসি বেড়াতে এসে বলেছিল- “এটা কার ঘরের নয়া বৌ গো?”
একথা শুনে মায়ের কোলে মুখ ঢেকে সে বলেছিল,
“পিসি নয়া বৌ, আমি না! ”
আজ তাঁর নিথর দেহ শুয়ে আছে বালু শয্যায় ।
সাগরের ঢেউ তাঁর সিঁদুরের শেষ চিহ্নটুকু মুছে দেয় ধীরে ধীরে।
শৈশবের পুরনো কথা কি ভুলে গেছে মেয়ে?
এতো উদাসীন সে কি করে হলো তাঁর সাজে!
সাদা শাড়িটির একটি প্রান্ত বাতাসে উড়ে উড়ে –
বলছে কি তাঁর শেষ কোনো বিজয়ের কথা?
(জানুয়ারি ৭, ২০২১ )

কয়েদী

চাবিহীন তালা ঝুলছে ঘরের দুয়ারে,
কয়েদীর কথা ভুলে গেছে আজ সবাই,
মনে নেই কারো অপরাধ তার কি ছিল,
কারাবাসে তবু প্রস্তুত তাঁর কসাই।
ভুলে গেছে সে কি আকাশের রং নীল?
ভুলে গেছে আজ কোকিলের ডাক কেমন?
কতকাল হলো ঝর্ণার নাচও দেখে নি,
স্বপ্নে সে দেখে রাতভর বৃন্দা বন।

এক বিন্দু শিশির

সমুদ্রে আজ উত্তাল ঝড়ে নৃত্যে –
জীর্ণ তরী ঘুরছে একই বৃত্তে,
নেই সীমানা নেই যে তীরের দেখা,
মাঝ সাগরে ডুববে তরী একা ।

আলোর আশায় অধীর চেয়ে থাকি,
আলোর বহর দিচ্ছে কি আজ ফাঁকি?
মেঘের উপর মেঘের আস্তরণ,
কালোতেই হোক আলোর সঞ্চারণ!

এমন চলছে, চলবে আরো কতো?
নিয়ম করে হৃদয়টি হয় ক্ষত,
সূর্য তারাও দিচ্ছে কি অভিশাপ?
এক বিন্দু শিশিরে এতোই পাপ?

একটি অভিশপ্ত গল্প

লুম্বিনীর বনে নয়,
ভক্তপুরের এক অভিশপ্ত গেস্ট হাউজে,
একটি অবাঞ্ছিত গল্পের জন্ম হয়েছিল
নববর্ষের এক রাতে। জন্মলগ্নেই
আতশবাজির বিষাক্ত গন্ধ
ঢুকে গিয়েছিল তাঁর ধমনিতে।
তিন’বছর পর আজও তাঁর ফুসফুস
সুপুষ্ট আতশবাজির ধোঁয়ায়।
গল্পটিকে নিশ্চিহ্ন করে দিতে চেয়েছে সে
অসংখ্য বার।
শরতের শুকনো সব ঝরা পাতা এক করে
আগুন জ্বালিয়ে ভস্ম করেছে সে গল্পটির শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত।
ভস্মগুলো আজ উপহাস করে –
চারদিকে উড়ে উড়ে ছড়িয়ে দিয়েছে তারা
এই অনাকাঙ্ক্ষিত গল্পের ক্লোন।
ডিসেম্বরের শীতে জমে গিয়ে ভস্মকণাগুলো
একটি বিশাল বরফ হয়ে গেছে।
গ্রীষ্মের সুতীব্র রোদে গলে নদী হয়ে আবার
তাকে ভাসিয়ে নিয়ে যায় উত্তাল স্রোতে ।