Monthly Archives: September 2020

সোনালি আয়না

সোনালি আয়না তাঁর ঝিলিক ছড়ায়,
রঙ্গীন দুনিয়া গড়ে বুকের ভিতর।
রঙের বাহারে ভুলে আরশি মায়ায়,
নিজেই দেখেনা আর নিজের গতর।
সোনার কিরণ ছোটে তীরের মতন,
চোখের মনির মাঝে বিঁধেছে সে তীর,
দুচোখে আঁধার তবু বিমূড় সে মন,
আলোর কঠিন ফাঁদে ডুবেছে গভীর।

তিব্বতী বৌদ্ধ নিকায়সমূহের সমিল বৈশিষ্টসমূহের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি

 বাংলাদেশের থেরবাদী বৌদ্ধদের সংঘরাজ ও মহাস্থবির নিকায়ের মতো তিব্বতী বৌদ্ধধর্মও প্রধানত চারটি নিকায় বা সম্প্রদায়ে বিভক্ত – যেমন, ১) নিঙমা (rNying Ma), ২) কাগ্যু (bKa rGyu), ৩) সাক্যা (Sa Kya), এবং ৪) গেলুগ (dGe Lugs)। তিব্বতী বৌদ্ধধর্মের গবেষকগন  এই চারটি সম্প্রদায়ের প্রথম তিনটিকে রোমান ক্যাথলিক সম্প্রদায়ের সাথে তুলনা করে প্রাক্তন (old) বা অসংস্কৃত (unreformed) এবং গেলুগকে প্রোটেস্টান্টদের সাথে তুলনা করে নব্য (new) বা সংস্কৃত (reformed) সম্প্রদায় হিসেবে উপস্থাপন করে থাকেন। তবে এই তুলনা তিব্বতী বৌদ্ধদের ক্ষেত্রে হয়তো সম্পূর্ণরূপে প্রযোজ্য নয়। কারণ প্রথম তিন সম্প্রদায়কে সেগুলোর ভারতীয় উৎস বা ভারতীয় গুরুদের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হওয়ার কারণেই প্রাক্তন বলে গণ্য করা হয়। তবে, গেলুগকে নব্য বা তিব্বতের স্বদেশজাত সম্প্রদায় বলা হয় কারণ এর প্রতিষ্ঠাতা জে ৎসংখাপা (rJe tSong Kha Pa) কখনো তিব্বত থেকে বহির্দেশে যাননি। প্রোটেস্টান্টরা যেভাবে রোমান ক্যাথলিকদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে নিজেদেরকে সংস্কার করে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল গেলুগদের ক্ষেত্রে পুরোপুরি তেমনটা হয়নি। তবে চারটি নিকায়ের মধ্যে সাংগঠনিক ক্ষমতা এবং দার্শনিক মতবাদের মধ্যে পার্থক্য নিশ্চই রয়েছে এবং এই মতপার্থক্য বিভিন্ন সময়ে পারস্পরিক দ্বন্ধ বা সংঘাতেও রূপ নিয়েছিল বৈকি। এই প্রবন্ধে এই চার সম্প্রদায়ের সমিল বৈশিষ্টগুলো সংক্ষেপে উপস্থাপন করা হবে। 

চারটি নিকায়ের প্রত্যেকটিই ‘ত্রি-যান’ এর ভাবাদর্শের উপর প্রতিষ্ঠিত। এর মধ্যে প্রথমটি হচ্ছে শ্রাবকযান। পন্ডিতগণের মতে বুদ্ধ ধর্মের এই আদি রূপ গৌতম বুদ্ধের কাল থেকে তাঁর অর্হৎ শিষ্যদের দ্বারা প্রথম সংগীতিতে প্রতিষ্ঠিত হয়ে এবং তাদের বংশ পরম্পরায় সংরক্ষিত হয়ে মহাযানী মতবাদের প্রারম্ভকাল পর্যন্ত; এর প্রতিষ্ঠার সময়কাল সাধারণত ৫০০ বছর বলে ধরা হয়। মানুষের নৈতিক ও চিত্তের উৎকর্ষ সাধনই এর প্রধান লক্ষ্য। একে বুদ্ধধর্মের নৈতিক ও মনস্তাত্ত্বিক অধ্যায়ও (Ethical and Psychological Phase) বলা হয়। পালি সাহিত্যের ত্রিপিটকীয় গ্রন্থে এবং চাইনিজ ভাষায় সংরক্ষিত আগম গ্রন্থগুলো হতে বুদ্ধধর্মের এই আদিরূপ বিস্তারিতভাবে জানা যায়। মহাযানীরা বুদ্ধধর্মের এই আদিরূপকে অর্হৎ-যান (Arhatyāna) বা হীনযান (Hīnayāna) বলে আখ্যা দেন কারণ তাদের মতানুসারে অর্হতরা ব্যক্তিকেন্দ্রিক। তাদের অভিযোগ নিজের বিমুক্তি লাভ করাই একজন অর্হতের লক্ষ্য, পর-কল্যানে অর্হৎগণ আগ্রহী নয়। তৎকালীন স্থবিরবাদ সহ বেশ কিছু বৌদ্ধ সম্প্রদায় বা নিকায় এই অভিযোগের স্বীকার হয়েছিল। এই অভিযোগের মধ্যে কিছুটা সত্যতা থাকলেও বর্তমান থেরবাদী বৌদ্ধরা পুরোপুরিভাবে সেই হীনযান অভিযুক্ত স্থবিরবাদীদের সাথে এক নয়। মহাযানীরা মনে করেন হীনযান সাহিত্যে বোধিসত্ত্বের ধারণা ও চর্চা নেই। থেরবাদীদের ক্ষেত্রে এই অভিযোগ প্রযোজ্য নয় কারণ থেরবাদী পালি সাহিত্যে – বিশেষ করে বুদ্ধবংশ, জাতক, চর্যা-পিটকাদি গ্রন্থে এবং অর্থকথায় বোধিসত্ত্বের সমৃদ্ধ ধারণা বিদ্যমান। থেরবাদী বৌদ্ধদের মধ্যেও বোধিসত্ত্ব এর বিভিন্ন কাহিনী ও এই আদর্শের চর্চার প্রচলন রয়েছে।

তথাকথিত হীনযানিদের উপর এই জাতীয় অভিযোগ করে এবং বিনয়ের বিভিন্ন সংকীর্ণতা উল্লেখ করে গৌতম বুদ্ধের প্রায় ৫০০ বছর পর দ্বিতীয় যান বা মহাযান তথা বোধিসত্ত্বযান পূর্ণ প্রতিষ্ঠা লাভ করে। শুধুমাত্র নিজ মুক্তি নয় পরকল্যানই এক জন বোধিসত্ত্বের মূল লক্ষ্য। বুদ্ধত্ত্ব লাভ করে সকল জীবকে অশেষ দুঃখ থেকে মুক্ত করাই তার অন্তিম প্রণিধান। মহাযানী সাহিত্যে শ্রাবকযানের নৈতিক চৰ্চা ও মনস্ত্বাত্তিক ব্যাপার সমূহ উপেক্ষিত হয়নি, হয়েছে সম্প্রসারিত। চিত্ত চৈতসিকের অভিধার্মিক বিশ্লেষণ সমূহ আচার্য্য অসঙ্গ (Asaṅga) এর অভিধর্মসমুচ্চয় (Abhidharmasamuccaya) ও আদি মহাযানী সাহিত্যে বিস্তৃতভাবে অলোচিত হয়েছে। এক পর্যায়ে মহাপন্ডিত আচার্য্য নাগার্জুনের মাধ্যমিক দর্শনের মাধ্যমে বস্তুর নিঃস্বভাবতা বা স্বভাবশূন্যতা যুক্তি দিয়ে প্রমাণিত হয় ও শূন্যতাবাদ প্রসিদ্ধি লাভ করে। মহাযানী প্রাচীন ভারতীয় যোগাচার ও মাধ্যমিক দর্শনের গ্রন্থগুলো তিব্বতী সকল বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে অধ্যয়ন করা হয় যদিও এই গ্রন্থগুলোর উপর প্রত্যেক সম্প্রদায়ের নিজস্ব ভাষ্য বা টিপ্পনীও রয়েছে। এভাবে মহাযানী সাহিত্যে বুদ্ধধর্ম দাৰ্শনিকভাবে যেমন সম্প্রসারিত হয়েছে তেমনি ভক্তিবাদও সুদৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে। ভক্তি বাদের এক পর্যায়ে  এমন মতবাদও প্রসিদ্ধ হয়েছে যে শুধুমাত্র বুদ্ধ ও বোধিসত্ত্বগণের নাম বা কোনো মন্ত্র জপ করেও মানুষ ক্রমে বুদ্ধত্ব লাভের দ্বারে পৌঁছতে সক্ষম। সদ্ধর্মপুণ্ডরীকাদি সূত্রে বলা হয়েছে কেউ যদি বালি দিয়ে চৈত্য বা বুদ্ধের প্রতিমা তৈরী করে বা সদ্ধর্ম আলোচনা হচ্ছে সেরকম স্থানের পাশ দিয়ে যায় তারও অনাগত কালে বুদ্ধত্ব লাভের  সম্ভাবনা আছে।  এক কথায় সবার মধ্যে বুদ্ধবীজ আছে। কারো নিরাশ হবার কিছু নাই। তবে এই বুদ্ধবীজকে লালন করতে হবে। বুদ্ধত্ব লাভ করা শুধু সময়ের ব্যাপার। মহাযানী সাহিত্যের এই ধাপকে বুদ্ধধর্মের অধিবিদ্যা ও ভক্তিবাদের অধ্যায় (metaphysical and devotional phase) বলেও পন্ডিতগণ উল্লেখ করে থাকেন।

মহাযানী দর্শন থেকেই তৃতীয় যান তথা আধ্যাত্মিক চর্চার সবচেয়ে উত্তম আদর্শ বজ্রযান  প্রতিষ্ঠা হয়। এর মধ্যে অনেক ধরণের তান্ত্রিক আচার, যোগ সাধনা, এবং গুহ্য সাধনার চর্চা হয়। তিন যানের মধ্যে বজ্রযানে গুরুর একনিষ্ট সান্নিধ্য এবং ইস্ট দেবতার প্রতি অগাধ বিশ্বাসকে বিশেষ গুরুত্ত্ব দেয়া হয়েছে। গৌতম বুদ্ধের শিক্ষার উপর ভিত্তি হলেও পাল রাজবংশের সময় বজ্রযান পূর্ণ প্রতিষ্ঠা হয় এবং পন্ডিত পদ্মসম্ভব ও তাঁর শিষ্য প্রশিষ্যের মাধ্যমে তিব্বতে বিস্তার লাভ করে।  এই তিন যানের একটির সূত্রপাতে অন্যটি বিলীন হয়ে যায় নি – অর্থাৎ মহাযানের প্রতিষ্ঠায় শ্রাবকযান বা হীনযানের বিলুপ্তি বা বজ্রযানের উৎপত্তিতে মহাযানের উচ্ছেদ হয়ে যায় নি। বরঞ্চ সব যান যেমন নিজ নিজ ভাবে বিভিন্ন দেশে সমৃদ্ধ হয়েছে তেমনি একটির আবির্ভাবে অন্যটির আদর্শও প্রভাবিত এবং সম্প্রসারিত হয়েছে। পন্ডিত অতীশ দীপঙ্করের ‘বোধিপথপ্রদীপ’ অনুসারে এই তিন যান বুদ্ধধর্মের ইতিহাসে তিনটি অধ্যায় মাত্র  নয় বরঞ্চ একজন সাধকের আধ্যাত্মিক চর্চায় ক্রমান্বয়ে তিনটি ধাপ। তিব্বতী বৌদ্ধদের প্রত্যেক সম্প্রদায়ের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে এই তিন যানের দর্শন এবং চর্চার শিক্ষা দেয়া হয়। 

দ্বিতীয় সমিল বৈশিষ্টটি হচ্ছে তিব্বতী সকল সম্প্রদায় তাদের মূল শাস্ত্রীয় গ্রন্থ মূলতঃ কাংগ্যুর (Kangyur) এবং তেঙগ্যুর (Tengyur) এর উপর ভিত্তি করেই সংগঠিত হয়েছে। কাংগ্যুর এ  প্রাচীন সূত্র এবং তন্ত্রের তথা বুদ্ধ বা তাঁর অনুপ্রেরণায় বিশেষ শ্রাবক ভাষিত বাণীর সংকলনে প্রায় একশো এবং কিছুকিছু সংস্করণ অনুসারে একশো আটটি গ্রন্থের তিব্বতী অনুবাদ রয়েছে। সদ্ধর্মপুণ্ডরীক সূত্র ও লঙ্কাবতার সূত্রের মতন প্রসিদ্ধ মহাযানী গ্রন্থগুলো কাংগ্যুরেই সংরক্ষিত আছে। মূলসর্বাস্তিবাদ বিনয় নামে তিব্বতী বৌদ্ধদের বিনয় গ্রন্থও কাংগ্যুরেরই অংশ। তেঙগ্যুরে বুদ্ধ ও শ্রাবকভাষিত সূত্র, তন্ত্র, বিনয়াদির ভাষ্য বা ব্যাখ্যা ও টিপ্পনি এবং পরবর্তীকালের বৌদ্ধ পন্ডিতদের রচিত দুইশ পঁচিশটি গ্রন্থের তিব্বতী অনুবাদ রয়েছে। আচার্য্য নাগার্জুন, বসুবন্ধু, অসঙ্গ, ধর্মকীর্তি, দিগনাগ প্রভৃতি পণ্ডিতগণের রচিত গ্রন্থ সমূহের তিব্বতী ভাষার অনুবাদ তেঙগ্যুরই সংরক্ষিত করা আছে। কাংগ্যুর এবং তেঙগ্যুর এর গ্রন্থগুলো তিব্বতের চারটি নিকায়েরই ভিত্তি। তবে এগুলোর মধ্যে সংরক্ষিত ধারণার ব্যাখ্যায় এই চার সম্প্রদায়ের তিব্বতী পণ্ডিতগণের মধ্যে কিছু মত পার্থক্য রয়েছে। 

তৃতীয় সমিল বৈশিষ্টটি হচ্ছে তাদের বিনয় সাহিত্য। চারটি সম্প্রদায়ই মূলসর্বাস্তিবাদ বিনয় ও প্রাতিমোক্ষ অনুসরণ করে এবং তদনুসারে শ্রামণ্য ও ভিক্ষু জীবন পরিচালনা করে থাকে। এছাড়াও তাদের ইষ্টদেবতা ও বিভিন্ন পূজা আচারের মধ্যে অনেক মিল রয়েছে। প্রকৃতপক্ষে একজন বাইরের লোকের কাছে এই চার সম্প্রদায়ের মধ্যে ভিন্নতার চেয়ে তাদের সমিল বৈশিষ্ট্য গুলোই বেশি প্রকট হয়ে দেখা দেয়। তবে তাদের মধ্যে যেই ঐতিহাসিক ও মতাদর্শিক ভিন্নতা আছে সেগুলোও একেবারে অগ্রাহ্য নয়। 

ছবি

সুচারু শিল্পী সে এঁকেছে ছবি এক
জগত বুকে ধরে দাঁড়িয়ে মুনিবর,
প্রাণীরা ঘোরে কারো নাই মৃত্যু ভয়
মানব শিশু আর বন্ধু পশু হয়।
বাগানে ফুল হাসে সাগরে মাছ সুখে,
হরিণী ডেকে ওঠে বাঁচারই উল্লাসে।
আকাশে উড়ে উড়ে পাখিরা গান গায়,
সীমানা খোঁজে তবে দেখে না দুনিয়ায়।
হাসির ঝিলিক সে মুনিরও ঠোঁটে দেখি,
অমিয় প্রেমে ভরা সুখের এ পৃথিবী।
তেমনই হতো যদি ছবির মতো সুখে,
রবে না চোখে জল কষ্ট কারো মুখে।

নুতন বেলা

দেহের সবচে তীক্ষ্ণ বেদনার পরে,
পৃথিবীকে আরো বেশী অপরূপ লাগে।
বাগানের ঘাসগুলো দেখে মন ভরে,
প্রকৃতির স্পর্শ পাই নব অনুরাগে।
‘বেঁচে আছি’ এই ভেবে শান্তি পায় মন,
হৃদয়ের কোষ ভরে ওঠে কৃতজ্ঞতায়।
কাঠবিড়ালিরা চায় খাবার যখন,
বুঝি আমি পর কেউ নয় দুনিয়ায়।
অনাদরে অতীতের শেকলের ফাঁদে,
আমাকে করেছি আমি কত অবহেলা,
বাগানের দোয়েলের ডাক শুনে আজ,
শুরু হবে জীবনের নুতন এ বেলা।

সাইরেন

প্রতিদিন ঘুম ভাঙ্গে সাইরেন শুনে,
পুলিস, ফায়ার ট্রাক ঘুরে অহরহ,
এম্বুলেন্স কত যায়, কি হবে তা গুণে?
মানুষ মরছে তার শুনছি কলহ।
বিষণ্ণ সাথীরা খোঁজে সান্ত্বনার বাণী,
জীবনের অর্থ নিয়ে ভাবছে সবাই,
নিশ্চিত মরণ হবে সত্য ঠিক মানি,
তবুও তো জীবনের মায়া কাটে নাই।
এখনো নদীর তীরে বন ফুল ফোটে,
এখনো প্রিয়র মুখ দেখে সুখ লাগে,
সাইরেন বাঁশি হয়ে মনে বেজে ওঠে,
কিছুদিন আরো যেন বাঁচি, স্বাদ জাগে।

বিষাদের গল্প

আজও মাঝে মাঝে হৃদয়ে তরঙ্গ ওঠে,
কারণে বা অকারণে,
তখন সে বোঝে –
জীবনের এখনো অনেক কিছু আছে বাকি।
রজনীগন্ধায় কোনো এক ষোড়শীর হাঁসি ফোটে,
সন্ধ্যায় ডুবন্ত সূর্যে মিশে থাকে লাল গোলাপের রং,
মারের কন্যারা – তৃষা, আরতি, ও রাগ,
উল্লাসে মাতে, এবং
নতুন এক গল্প রচনা করে,
যেখানে পূর্ণতা খোঁজে অতৃপ্ত বাসনাগুলো
যেখানে মিলনের উত্তেজনায় ভয় মিশে থাকে,
যেখানে প্রাপ্তির আনন্দকেও মিথ্যা মনে হয়,
এবং নিষিদ্ধ আবেগগুলো নূতন কোনো প্রবঞ্চনার ভয়ে –
ত্রস্ত হবে তাদের ন্যায্য অধিকার চর্চায়,
নিজের সবচেয়ে বিশ্বস্ত সত্যের উপর হৃদয়ে আস্থা হাঁরিয়ে,
আবারো তাকেই অভিশাপ দেবে তারা,
এইভাবে…
শুরু হবে নতুন এক বিষাদের গল্প।
(সেপ্টেম্বর ৬, ২০২০ )

কীট পোকাদের স্নেহ

জীবন কেটেছে যার নিরব স্বভাবে,
কোনদিন কেউ যার নেয় নি খবর,
একদিন প্রাণে তার গতি থেমে যাবে,
চিরতরে রুদ্ধ হবে সেই কণ্ঠস্বর।
কেউ যদি মন দিয়ে শোনেও তখনো,
হয়তো বুঝবে তাঁর মনের বেদনা,
যে বেদনা ছিল হাড়ে মজ্জায় লুকনো,
একটু মমতা খুঁজে কখনো পেলনা।
তখন সবাই রবে ব্যাস্ত নিজ কাজে,
মাটি আর জলে মিশে যাবে তার দেহ,
পৃথিবীতে মিশে তাঁর বেদনার শ্বাস,
খোজবে তখন কীট-পোকাদের স্নেহ।

নূপুর

একদিন নেশা তার
ছিল শুধুই নূপুরে,
রাতদিন গুণ গুণ,
সকাল আর দুপুরে।
খিলখিল হাঁসি তার
সবাই দূরে শুনতো,
তারপর হঠাতেই,
সব হলো শান্ত।
নূপুরের গুঞ্জনও,
বাজছে না বাতাসে।
মনখোলা হাঁসি তার
হারালো কোন আকাশে?

মারের তিন কন্যা

মারকে দমন করেছে যেদিন উপগুপ্ত,
তার তিন মেয়ে কোথা ছিল কেউ জানে কি?
এখনো কি করে ঘুরছে তারা যে অবমুক্ত,
রাগ তৃষা আর রতির মায়ার মানে কি?
কত সাধকের কুটিরে তারা যে ঘুরে বেড়ায়,
সব ত্যাগ করে বনে বাস করে যারা একা,
মার-কন্যারা ছলনায় শুধু মন ভোলায়,
সাধক পায়না মুক্তির কোনো রূপ রেখা।

মন

মন তুমি কার? কোথায় থাকো?
কেমন তোমার রূপ?
আমায় নিয়ে খেলছ তুমি,
কি খেলা চুপ চুপ ?
আমায় নিয়ে ঘুরছ তুমি,
বিশ্বচরাচরে।
আমার আমি রই না কেবল,
শুধুই আমার ঘরে।
তোমার চাওয়ার অন্ত কি নাই?
কল্পনারও ইতি?
গল্প তুমি বলছ কত,
নাই কি পরিমিতি?
নিরন্তর এই কথার ঘোরে,
ক্লান্ত আমার দেহ,
আমার জন্য মনের মনে,
একটু কি নেই স্নেহ?


একটু আমায় দে অবসর,
নিজ ঘরে যা তুই,
বন্ধ কর এই ঘোরের খেলা,
শান্তিতে ঘুমুই।