Monthly Archives: May 2021

মন

চোখ দেখা যায় মুখ দেখা যায়
মন দেখা যায় না,
চোখের ভিতর লুকিয়ে থাকে
মনের এক আয়না ।
হাত ধরা যায় কান ধরা যায়
মন ধরা যায় না,
দু চোখ মনের বলছে কথা
কেউ শুনতে কি পায় না? 
(মে ১৯, ২০২১)

পুষ্প মানব

শুনেছি গাছে গাছে শাখার ডালে ডালে
পাতার ঝন ঝন বাতাস বয়ে যায়,
হৃদয় ভরে যায় নদীর পারে শুনি
পাখিরা গান গায় স্রোতের তালে তালে ।
নদীর জলে সব বিষাদ ভেসে যাক,
সাঁঝের আকাশের আলো কী সুন্দর,
ফুলেরা কাছে ডাকে আপন করে নেয়
ঘ্রাণের সমাহার হৃদয়ে মিশে যাক।
জীবন হয়ে যায় ফুলের মতো যদি
ছড়াবে সুঘ্রাণ হাসবে শিশুদল,
অচেনা পথিকেরা আসবে কতো কাছে
পুষ্প মানবেরা এতোটাই কি বিরল?

(মে ৭, ২০২১)

আজকাল সবাই উড়ছে

আজকাল সবাই উড়ছে
উত্তর থেকে দক্ষিনে
পূর্ব থেকে পশ্চিমে
পৃথিবীর একপ্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে
গ্রহ থেকে গ্রহান্তরে
ছুটছে সবাই
কখনো বা কোনো গন্তব্য ছাড়াই
শুধুমাত্র এক জায়গায় থাকতে চায় না বলে
উড়তে উড়তে সবাই কোথায় যেন চলে যাচ্ছে
আজকাল কেউ আর হাটছে না
অথবা হাঁটতে ভুলে গেছে
কেউ আর বসছে না, দাঁড়াচ্ছে না
সবাই উড়ছে, লাফাচ্ছে
এই বিশ্ব মহামারি করোনার কালে
কথা ছিলো ঘরে বসে থাকার
নিজের সঙ্গে মুখোমুখি হয়ে
না বলা কথাগুলো শোনার কথা ছিলো
কথা ছিলো মৃত্যুকে ভাবার
জীবনকে কাছ থেকে দেখার সুযোগ হয়েছিল
তবে এসব কিছুই হচ্ছে না
মানুষের চোখগুলি কিনে ফেলেছে
বিনোদনের কর্পোরেট দৈত্যরা
মানুষ ঢুকে গেছে হলিউড আর ডিসনি লেন্ডের রঙীন দুনিয়ায়
সবাই উড়ছে,
একটি গ্রহ থেকে অন্য গ্রহে
কেউ আর হাঁটছে না, দাঁড়াচ্ছে না
কেউ আর মুখোমুখী বসছে না
কেউ আর কারো কথা শুনছে না
উড়তে উড়তে ক্লান্ত হলে তারা লাফাচ্ছে, তবুও
পৃথিবীর মাটিকে কেউ আর চাইছে না ছুঁতে
(মে ৬, ২০২১)

মৃত্যুর জন্য আমি থামতে পারি নি তাই

(এমেরিকার কবি এমিলি ডিকিন্সনের কবিতা Because I could not stop for death অনুবাদ করার চেষ্টা করেছি )


মৃত্যুর জন্য আমি থামতে পারি নি তাই-
আমার জন্য দয়া করে থেমেছিল সে নিজেই-
রথে শুধু আমরা দু’জন-
এবং স্বয়ং অমরত্ব ।
ধীরে ধীরে চলছিল রথ-
ছিল না তাঁর কোনো ত্বরা।


তারে সম্মান করে আমি-
দূরে রেখে আসি-
আমার কাজ আর অবসরও।
পথে ছিল সে বিদ্যালয় যেখানে
বিরতিতে – চক্রের মাঝে –
খেলছিল শিশুদের দল
পার করে যাই আমরা ক্রমে ফসলের মাঠ-
পার করে যাই অস্তগামী সূর্যকে –

হয়তো সূর্যই – পার করেছে আমাদেরকে –
শিশির ক্রমে ঠাণ্ডা হয়ে আসে –
কাঁপায় শরীর,
পরিধানে ছিল লূতাতন্তু –
ওড়নায় – সূক্ষ্ম রেশম –

মাটি ফুঁড়ে ওঠা যেন একটি ঘরে
আমরা থামি
ছাদ তাঁর আবছা করেই দেখা যায়
কার্নিশ – ছিল মাটিতেই

তারপর – কেটে গেছে – কত শত বছর
তবু মনে হয় কাটেনি একদিনও
সে প্রথম মনে হয়ছিল
ঘোড়াগুলো যাচ্ছিল অমরত্বের দিকেই –

চক্র

দালান বাড়ি, ফুলের বাগান
নদীর চড়ও ক্ষয় হয়ে যায়!
কালো চুলও সাদা হবে,
দু’চোখ ক্রমে দৃষ্টি হারায়।
কোলের শিশু বড় হবে
বৃদ্ধ হবে,
চারা গাছে পুষ্প হবে,
ফলও হবে,
তারপরে সব মিশে যাবে
মাটির সাথে, জলের সাথে,
ঘুরবে হাওয়ায়।
এখন যারা আছে তাঁরা কেউ র’বে না,
আমার কথা পরে কি আর কেউ ক’বে না?
এমনি করেই আজকের দিন কাল হয়ে যায়।
আসছে সবে কোথা হতে,
চলে আবার যাচ্ছে কোথায়?
(এপ্রিল ২৮, ২০২১)