Monthly Archives: August 2022

পাপ

পাপ
উপালি শ্রমণ

পাপ বলে কিছু হয়তো বা নেই,
নরকের কথা হয়তো বা সব মন ভোলানোর
কল্পকাহিনী।
তারপরও যদি শুন্যাকাশে
চেয়ে চেয়ে চোখ জ্ল ভরে যায়,
অথবা যখন অনাকাঙ্ক্ষিত শব্দ বলার
উত্তাপে রাতে ঘুম পুড়ে যায়,
ঘড়ির কাঁটাকে উলটো ঘুড়িয়ে
হারানো সময় ফিরে পাওয়ার তীব্র ইচ্ছা
ঘুণ পোকা হয়ে
অস্থি মজ্জা কুরে কুরে খায়,
ক্ষুধার জ্বালায় মনে হয় যদি
“রাস্তার কীট আমার চেয়েও
কতো সুখে থাকে!”
অথবা নিজেই পতঙ্গ হয়ে
রাতের আঁধারে মিশে যাওয়ার
বাসনাও জাগে,
তখন কি আর মৃত্যুর পর নরকের কোন
প্রয়োজন আছে?
(আগস্ট ২৭, ২০২২ )

হৃদয়ে পদ্ম

হৃদয়ে পদ্ম
উপালি শ্রমণ

হৃদয় একটি পদ্ম ফুলের
বীজ কোথা কবে করেছে ধারণ
দেখিনি তো আমি।
ধীরে ধীরে তাঁর শেকড় গজায়,
গ্রীষ্মে তীব্র রোদে ঝলসানো
আমার হৃদয়
এতো উর্বর!
বুঝিনি তো আমি।
চিরকাল শুধু দগ্ধ মাটির
ঘ্রাণ শুঁকে গেছি।
পদ্ম ফুলের শেকড়ের সেবা
কি করে করবো,
শিখিনি তো আমি।
(আগস্ট ২৫, ২০২২)

কিছু কিছু কথা ভুলে যেতে হয়

কিছু কিছু কথা ভুলে যেতে হয়
উপালি শ্রমণ

কিছু কিছু কথা ভুলে যেতে হয়
গাছের শুষ্ক বাকলের মতো,
পুরনো দিনের সঞ্চিত স্মৃতি
ঘুণ ধরে গেছে, ধীরে ধীরে সব
ঝড়ে পড়ে যাবে।
কিছু কিছু হবে-
পোকামাকড়ের স্বাদের আহার
কিছু মিশে যাবে –
মাটির সঙ্গে ।

হৃদয়ে গুদাম এতো বড় নয়,
তাই কিছু কথা ফেলে দিতে হবে।
মেয়াদের শেষে দুধের বোতল
বিষ হয়ে যাবে,
ঘরে রেখে আর কোন লাভ নাই।
(আগস্ট ২৫, ২০২২)

নীতি কথা

নীতি কথা
উপালি শ্রমণ

পঞ্চ শীলের কথা বলবো না আমি আর,
স্বর্গ লাভের কথাও আজকাল অবাঞ্ছিত।
ভালো খারাপের প্রভেদে নিযুক্ত বাক্যবাগীশের
ক্লান্তিকর অবিরাম ক্যাচর ক্যাচর
শোনবার অবকাশ নাই কারো আজ।

যা কিছু সুনীতি পুরনো পণ্ডিতেরা বলেছে
তাঁর উলটোই অতীব সহজ।
চুরি থেকে বিরতীর কথা নয়,
চুরিবিদ্যাই সবচে সুপ্রশংশিত
নিখুঁত ললিতকলা।
সত্যবাদী বিলুপ্ত প্রাণীর ঠাই হোক
চিড়িয়াখানায়।
‘যৌন অসদাচারন’ বিদূষকের পাঞ্চ লাইন
ভাষারই বলৎকার!
কলাগাছের ভেলায় তাঁর নির্বাসন হোক
রামরাজ্যই তাঁর শান্তির আশ্রয়।
অহিংসার কথা বলে রূপসী সংবাদ পাঠিকার
জীবিকা হত্যার পাপ আমি করতে চাই না।
চাকরি চ্যুত হবে দুঃসাহসী সংবাদ শিকারি –
তাঁর অন্নহরন করে কি নীতির কাজ হবে?

আজ বিজ্ঞানের কথাই বরং বলি –
পৃথিবীর মাটি নিয়ে মঙ্গলগ্রহে কি ফল চাষ হবে
সারারাত জেগে থাকি আমি তাঁর উত্তেজনায়।
বুদ্ধরা প্রাচীন।
দর্শনের কথাও আজ অবান্তর।
কবিতার নামে ঘোলাটে শব্দের মাঝে,
জীবনকে বিভীষিকাময় করা অর্থহীন।
কাজের কথাই আমি বলি –
মানুষের মতো যখন রোবট কথা বলে
অতি সহজেই সব কাজ করে দেয় যন্ত্র
মানুষেরা হয়তো পৃথিবীর বোঝা হয়ে যাবে,
সিরিয়া ও ইয়ুক্রেনে বিধ্বংসী বোমা পাঠানোর জন্য, তাই
চলুন সবাই –
জাতিসঙ্ঘে সোচ্চার আহ্বান জানাই।
য়েমেন দুর্ভিক্ষে শিশুদের মৃত্যু হার, এবং
বৈশ্বিক উষ্ণতার প্রভাবে
যেই দেশগুলো সাগরের তলে ডুবে যাবে-
বন্ধুরা আসুন,
তাঁর গতি আরও দ্রুততর করতে হবে!
তারপর পঞ্চম শীলের বুক শেষ পেরেকটি ঠুকে
রোবটের সবচেয়ে নিকট আত্মীয় যারা
রয়ে যাবে তারা
মহানন্দে করবে তখন
নীতিহীন নতুন পৃথিবীর উৎসবের আয়োজন ।

মহাকাব্য

মহাকাব্য
উপালি শ্রমণ

শেওলা প্রলেপ পাথরে জমাট বাঁধে,
সবুজ কোমল ছিল তারা একদিন।
গুটি গুটি কনা পাললিক শিলা গড়ে,
মহাকাল শোধরায় ক্ষণিকের ঋণ।
আমিও ছিলাম তুলতুলে কাদা হয়ে,
বানিয়েছ তুমি তোমার ইচ্ছেমত।
তারপর রাত কৃষ্ণ চাঁদের লয়ে,
আকাশটি হয় কুয়াশায় ঘনীভূত।
আমার অলেখা সেই মহাকাব্যটি,
স্বরবর্ণের আদিতে হয়েছে শুরু।
পাতায় পাতায় ভরে ঘন কুজ্ঝটি,
কলমের ডগা ধীরে ধীরে হয় পুরু।
(আগস্ট ৪, ২০২২)

মৃগতৃষ্ণা

মৃগতৃষ্ণা
উপালি শ্রমণ

তোমার ছায়ায় একটু হবে না ঠাই?
আর কতো আমি পোড়াবো যে রোদ্দুর?
নীল জলে সব ধুয়ে মুছে নিতে চাই,
অদূরেই শুনি সান্ধ্য পাখির সুর।
তৃষ্ণাই নাকি সব বিনাশের মূল,
তৃষ্ণাই নিয়ে যায় সাগরের কাছে।
সাগরের জল পান করে মশগুল,
কোথায় তোমার নীল সরোবর আছে?
চাতক ভেবেছে স্বচ্ছ শীতল জলে
সঞ্চিত সব তিয়াষের শেষ হোক।
মৃগতৃষ্ণায় আমি তো বুঝিনি ছলে,
আমাকে সাগর তিলে তিলে করে ভোগ।
(আগস্ট ৩, ২০২২)