বৃষ্টির কবিতা

বর্ষার বৃষ্টিতে — নরেশ গুহ

এক বর্ষার বৃষ্টিতে যদি মুছে যায় নাম
এত পথ হেঁটে এত জল ঘেটে কি তবে পেলাম?
এত যে সয়েছি, এত যে পেয়েছি,
দুঃখ-সুখের ধারায় নেয়েছি,
দুচোখে দেখেছি অপার্থিবের, অফুরন্তের ঝর্ণা
প্রকৃতির রীতি মানুষের ঘর-করনা।

মার কোলো শিশু ঘুমে অচেতন,
চুলে বিলি দেয় হাওয়া —
একটি চুমোয় বিশ্বের সব খ্যাতি গৌরব
বিত্তের স্বাদ পাওয়া।

ধিক্কারে ভরা নোংরা নরকে
একটি কথার গানে
শত বার ফিরে জন্ম নেবার
অভিলাষ আনে প্রাণে।

সব আশা যদি চুরমার হয়
ভাঙে ফুলদানী, ভোরের চায়ের বাটি
যে পথে সে আর ফিরবে না
তবু আর একবার সেই পথ দিয়ে হাঁটি।
তৃষ্ণা মেটে না দেখে।
এখন কি তবে জলে লিখে নাম চলে যেতে হবে?
কী তবে পেলাম, কী তবে হলাম!

চিরজীবীদের জয়টিকা আর অসামান্যের মাল্য
প্রতিজ্ঞা করে কেটেছে একদা দেব-দুর্লভ বাল্য।
ছিল না শঙ্কা, মনের কোনায় সন্দেহ ক্ষীণ
শিশু উল্লাসে হাওয়ায় হাওয়ায় সে আমার দিন

রাঙা বুদবুদ উড়িয়ে দিয়েছি চপল খেলায়
আজ যৌবন খর-জীবনের মধ্য বেলায় –
এখন দেখছি কত যে স্বপ্ন কত যে ইচ্ছে
হল না জীবনে পূরণ — কে তার হিসেব নিচ্ছে!

চলতে চলতে নিজেই ভুলেছি, কত না দুপুর
কালো ভ্রমরের পাখায় এনেছে বহিয়া কী সুর
লঘু প্রহরের সে-সুর ছন্দে গাঁথার সময়
পেল না হৃদয়।

দীর্ঘ গ্রীষ্ম কেটে গেছে, কত গানের চরণ
চোখোর সামনে জারুলের শাখা বেগনি বরণ
পুষ্প-প্রদীপে অপব্যয়ের যে উদাহরণ
স্থাপন করেছে, তা দেখে আমার হৃদয় জানতো
আমারো তা হবে। জারুল শাখায় যে অফুরন্ত
আমারো জীবন জারুলের মতো করবে তুচ্ছ

সকল চিহ্ন অবলেপকারী কালের ইচ্ছা
আমিও পারব এ মরদেহের ধ্বংস ভুলতে
হিমে উলঙ্গ কালের শাখায় পুচ্ছ তুলতে।

আমি তো কখনো করি নাই তাই কারো প্রতীক্ষা
হায় দুরন্ত শ্রাবণ, তুমিই দিয়েছ শিক্ষা
হৃদয় শুধুই দু’হাতে বিলাতে, ঝরাতে শুধুই
তোমার মতোই সঞ্চয় আমি রাখিনি কিছুই।

আজ রাত্রিতে বৃষ্টি নেমেছে
একা বিছানায় ঘুম চোখে নেই –
শুয়ে শুনি হাওয়া ডেকে ডেকে যায়
যেন মনে হয়, আজ রাত্রিতে এখানে আসার
কত কাল থেকে রক্তে আমার কথা ছিল কার!

আমাকে অমর করার মন্ত্র সে বুঝি জানত
সে অপার্থিব, সে অফুরন্ত –
সে যেন আমার লক্ষ্য-বিহীন সকল গানের অকুল মোহনা
সে যেন আমার অধীর প্রাণের চির প্রতীক্ষা
হায়, দুরন্ত উতল শ্রাবণ
তোমার শিক্ষা — এই তো করল!
এখন কি শেষে জলে লিখে নাম চলে যেতে হবে?
কি তবে হলাম!

Leave a comment