Tag Archives: মিশ্র

বুদ্ধের অন্তিম নির্দেশ, মেরি অলিভার

নীচের কবিতাটি মার্কিন কবি মেরি অলিভারের “Buddha’s Last Instruction” কবিতার অনুবাদ। মূল কবিতাটি পরতে পারেন এখানে

“নিজেকে নিজের দীপ করো”
বুদ্ধ বলেছিলো,
তাঁর নির্বাণের আগে ।
প্রত্যহ সকালে আমি এই কথা ভাবি
পূর্বদিক ধীরে ধীরে যখন
ছিঁড়ে ফেলে মেঘের আস্তরণ
প্রথম সংকেত পাঠাতে –
একটি সাদা পাখা
গোলাপি, বেগুনী এমনকি সবুজ
রেখায় অংকিত।
অশীতিপর একজন বৃদ্ধ,
শায়িত ছিল সে
দুইটি শাল বৃক্ষের মাঝখানে,
অন্য অনেক কিছুই সে বলতে পারতো,
তাঁর শেষ মুহূর্তের কথা যখন জানাই ছিল।
আলো জ্বলে উপড়ের দিকে,
ঘন হতে হতে স্থায়ী হয় মাঠে।
চারপাশে তাঁর জরো হয় গ্রামের লোকেরা
সামনের দিকে ঝুঁকে তারা শোনে।
সূর্য নিজেই অনাসক্ত হয়ে,
নীলাকাশে ঝুলে পরার আগে,
আমি তাঁর হলুদ ঊর্মিতে সিক্ত হই
সব দিক থেকে।
নিশ্চিত সে ভেবেছিল
কেমন কেটেছে তাঁর এই দীর্ঘ জীবন।
তারপর আমি রৌদ্র অনুভব করি,
পাহাড়ের উপর যখন সে জ্বলজ্বল করে,
এক লক্ষ ফুল যেমন আগুনে দগ্ধ হয় —
আমি যে অবান্তর- সেটা পরিষ্কার,
তারপরও বুঝতে পারি আমি
অন্য কিছুতে পরিবর্তিত হই ধীরে ধীরে
এমন কিছু যার মূল্য ব্যক্ত করা দুরূহ।
গাছের শাখার নীচে
শির তুলে তিনি
দেখেন শঙ্কিত ভিড়ের মাঝে।

সিদ্ধির নদ (ভক্তি-গান)

বুদ্ধের পদে আমি বন্দামি
ধর্মের সিঁড়ি বেয়ে পথ চলি।
সংঘের স্মরণ অনুসরণে আমি
সিদ্ধির নদ চলি পাল তুলি।
সত্যিই জানি আমি সফল হবো
সত্যের পথে সদা অনড় র’ব।
‘এস যদি চাও তুমি আমার পথে,
মুক্তি পাবে সব দুঃখ হতে। ‘
এই কথা বলেছিলো সুগত মহান
এখনো প্রতিধ্বনি বাজে অম্লান।
দিন যায় রাত যায় ঘনায়ে আসে
নির্দয় কালের ক্ষণ তোমারই পথে
সুচিন্তা করো তুমি কোন পথে যাবে,
দেরি যদি করো তবে সব হাঁরাবে।
সময় হাঁরাবে যদি দুস্কর্ম করো
শেষ বেলাতে হবে সংকট বড়ো।
(রচনাকাল ২১/১০/২০০৬/ শনিবার
প্রথম প্রকাশ – বোধিরশ্মি ২০০৭
সম্পাদক ড. রতনশ্রী ভিক্ষু কলকাতা )

ছোঁয়া

ছোঁয়া
উপালি শ্রমণ

আমি জানি
আমার ছোঁয়ায় ফুল ঝরে পরে
কখনো সূর্যমুখী
কখনো গোলাপ
কখনো সন্ধ্যামালতী
আমাকে দেখেই মুখ ফিরে নেয়
অথচ তোমার হাতে
মৃত ফুল পুনঃ পুনঃ প্রাণ ফিরে পায়
শরতের ঝরা পাতা সজীবিত হয়
শুষ্ক নদীর বুক জলে ভরে যায়
তোমার কাছেই শত নষ্ট ফলের বীজ
আকাশের ছোঁয়া পেতে দু’হাত বাড়ায়
বুঝি না আমাকে দেখে
পূর্ণিমা চাঁদ কেন
কালো মেঘ কাছে ডেকে
ঘোমটা সাজায়
(সেপ্টেম্বর ১৫, ২০২২)

খেলা

মাঠের দু’পাশেই আমি
আমি গোল রক্ষক
আমিই স্ট্রাইকার
আমিই ডিফেন্ডার
আমিই রেফারি
দর্শকও আমি
মাঠের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত
ছুটছি সারারাত
আমি খেলছি
আমি গোল দিচ্ছি
আমি গোল রক্ষা করছি
আবার গ্যালারিতে বসে আমিই দেখছি
(সেপ্টেম্বর ১৪, ২০২২)

খাদ্য-বৈচিত্র্য

খাদ্য-বৈচিত্র্য
উপালি শ্রমণ

বন্ধু য়োহান নাকি
শুধু পাউরোটি খায়,
সাদা ভাত খায় না সে
জার্মান ছেলে তাই।

ইতালীর সিল্‌বিয়া
প্রিয় তার পাস্তা।
চীনের শিনজি করে
নুড্ল্‌সে নাস্তা।

রোটি হয় টরটিয়া
মেক্সিকো ভাষাতে,
শিম বিচী চনা দিয়ে
খুব মজা খাওয়াতে।

তিব্বতী ওয়াংচুক
বাটার চা করে পান,
সাম্পাও পায় যদি
সুখে তার নাচে প্রাণ।

ভূটানী ও নেপালিরা
তিব্বতী মোমো খায়,
ডাম্প্লিং নামে চীনে
ভারতেও পাওয়া যায়।

লংকার লোকে খায়
নারিকেল সাম্বোল,
রাঁধে পাকা আম তারা
কাঁঠালেরও খায় ঝোল!

বিশাল ভারতে কতো,
খাদ্য যে পাওয়া যায়।
বাঙ্গালীর মাছ ভাত,
খুবই খ্যাত দুনিয়ায়।

(মার্চ ২২, ২০২২)

আরো একটা দিন আমি বেঁচে গেলাম

আরো একটা দিন আমি বেঁচে গেলাম
উপালি শ্রমণ

আরো একটা দিন আমি বেঁচে গেলাম,
আজকেও তুফান হয়েছে কোথাও,
তবে আমার বাসা পর্যন্ত সেই তুফান আসেনি
আমার বাসাটি এখনো অক্ষত রয়ে গেছে,
আমি বেঁচে গেলাম ।
আজকেও সড়ক দুর্ঘটনায় কিছু মানুষ মারা গেছে,
ভাগ্যিস আমি সেই সড়কে ছিলাম না,
একটি সড়ক আজ আমার রক্তে রঞ্জিত হয়নি,
আমি বেঁচে গেলাম ।
আজকেও সন্ত্রাসীর হামলায় কিছু মানুষ প্রাণ হারিয়েছে,
আমি সেই সন্ত্রাসীদের নজরে পড়িনি,
এই দেহ রক্ষা পেল একটি গুলি বা আত্মঘাতী বোমা থেকে,
আমি আবারো বেঁচে গেলাম ।
আজকেও যুদ্ধে এবং দুর্ভিক্ষে ফুলের মতো কত শিশু প্রাণ হারিয়েছে,
অসংখ্য মেয়ে ধর্ষিতা হয়ে নির্মম ভাবে মৃত্যু বরন করেছে,
এক মহামারি নিয়ে গেছে কত শত প্রাণ
আমি ভাবছি –
আরো একটা দিন আমি বেঁচে গেলাম ।
প্রকৃতি ও মানুষের নির্মম হিংস্রতা আমাকে স্পর্শ করতে পারেনি।
আরো একটা দিন পৃথিবীর আলো বাতাস,
বন্ধু এবং প্রিয়জনের অপার ভালবাসায় আমি আমি বেঁচে আছি,
আরো একটা দিন আমি ঘুমাতে যাচ্ছি –
তাদের প্রতি অশেষ কৃতজ্ঞতা স্মরণ করে ।
আর ভাবছি –
শুধুমাত্র বেঁচে থাকার আনন্দ আর বেদনা একসাথে কী তীব্র ও দুঃসহ হতে পারে।

জাগৃতির ফল

[এই কবিতাটি ভিয়েতনামের আধ্যাত্মিক গুরু  এবং কবি থিক ন্যাট হানের কবিতা  “The Fruit of Awareness is Ripe” এর অনুবাদ।]

আমার জীবন
একটি অপরিপক্ব প্লুম।
যার উপর চিহ্ন রেখে গেছে তোমার দাঁত।
দাঁতের চিহ্নগুলো এখনো শিহরিত করে।
আমার সবসময় মনে পরে,
মনে পরে সবসময়।

যখন থেকে তোমাকে ভালবাসতে শিখেছি,
আমার আত্মার দরজা খুলে রেখেছি বিশদভাবে
যেন চারদিকের বাতাস নির্বিঘ্নে প্রবেশ করতে পারে।
বাস্তবতা পরিবর্তনের দাবি রাখে।
জাগৃতির ফল পেকে গেছে ইতিমধ্যেই,
এবং দরজাটি আর বন্ধ করা যাবে না কোনভাবেই ।

যুদ্ধের আগুন দগ্ধ করে ফেলেছে এই শতাব্ধিকে,
পর্বত এবং জঙ্গল তাঁর চিহ্ন ধারণ করছে।
বাতাস আমার কানে গর্জন করে,
যখন সমগ্র আকাশ তাঁর তুষারঝটিকায় –
কম্পিত হয় তুমুলভাবে।

শীতের ক্ষত এখনো রয়ে গেছে,
হিমায়িত তলোয়ার ফাঁকি দিয়ে,
অস্থির, যন্ত্রণায় সারা রাত
এদিক থেকে ওদিক পাশ কাটতে থাকে।…

অন্তর্ধান

[এই কবিতাটি ভিয়েতনামের আধ্যাত্মিক গুরু  এবং কবি থিক ন্যাট হানের কবিতা  “Disappearance” এর অনুবাদ।]

শিশিরের ভারে,
নমিত হয় পাতার ডগা।
ফলগুলো পরিপক্ব হয়
পৃথিবীর প্রথম সকাল।
ড্যাফোডিল প্রজ্বলিত হয় –
সূর্যের আলোয়।
বাগানের প্রবেশ পথেই
মেঘের পর্দা আছে টাঙ্গানো।

সদৃশতার অবয়ব

[এই কবিতাটি ভিয়েতনামের আধ্যাত্মিক গুরু  এবং কবি থিক ন্যাট হানের কবিতা  “Structures of Suchness” এর অনুবাদ।]

পাখির ছানাদের ধমক দিয়ো না,
তাদের গান আমাদের বড়ো প্রয়োজন ।
নিজের দেহকেও ঘৃণা করো না,
এটি মনুষ্যত্ব বিকাশের পবিত্র বেদী।

তোমার চোখ সহস্র ইন্দ্রজালকে ধারণ করে,
তোমার কান সার্বভৌমত্ব বিরাজ করে-
পাখি, বসন্ত, ঊর্ধ্বগামী ঢেউ,
বিথোবেন, বাক, ছপিন,
শিশুদের কান্না,
এবং ঘুমপাড়ানির গানের উপর।
তোমার দুই হাত ভালবাসার ফুল
যেগুলো কেউ কোনোদিন উপড়ে তুলবে না,
এবং তোমার কপাল হচ্ছে
সব সকালের চেয়ে সুন্দরতম সকাল।
তোমার ভিতরে সদৃশতার এই অবয়ব ধ্বংস করো না।

খেতের ভুট্টো, ঘাস, এবং রাতের সুঘ্রাণ সব
শান্তির জন্য কথা বলছে।
আমি জানি একটি গুলি হয়তো আজ সকালে
পাখির ছানাটির বুকে আঘাত করবে,
খেতের ভুট্টো, ঘাস, এবং রাতের সুঘ্রাণ সব
চাঁদ এবং তারাদের সঙ্গে মিলে –
আমরা সর্বোত্তম চেষ্টা করছি।
আমাদের যত সাধ্য আমরা করছি
তোমাকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য।

শান্ত

[এই কবিতাটি ভিয়েতনামের আধ্যাত্মিক গুরু  এবং কবি থিক ন্যাট হানের কবিতা  “Calm” এর অনুবাদ।]

শৈশব কালের –
আলোকিত বারো বছর বয়স –
তোমরা কি বলো?

প্রাচীন নদী ও
পুরনো শহর
মেঘ ঢাকে নীল একটি আকাশ

শান্ত