Tag Archives: মুক্তির গান

তবু কী বিস্ময়

তবু কী বিস্ময়
উপালি শ্রমণ

কখনো শুনেছ কি পথিক কান পেতে
দেহের প্রতি কোষে গল্প কতো আছে,
ইচ্ছে হলে তুমি শুনতে পাবে সব
বন্ধ করে চোখ প্রতিটি নিঃশ্বাসে।

প্রতি মুহূর্তেই হৃদয় স্পন্দনে
করিছে গুনগুন কালের সঙ্গীত,
রক্ত মাংসের অতীব সাধারণ
তবু কী বিস্ময় চিত্ত সংবিৎ।

আহা কী বিস্ময় একটি হৃদয়ের
আকার কতো ছোটো তবু কী সুবিশাল,
জগতে যত জীব সব সে একসাথে
ধারণ করে একা হৃদয় মহাকাল।

শুনতে পাবে তাঁর নিগুড় কৌশল
কি করে জগতের সকল সৃষ্টিতে,
নিয়ত মিশে রয় করে সে প্রেমময়
ভাঙে সে দ্বৈততা অভেদ দৃষ্টিতে।

স্বাধীনতার গান

স্বাধীনতার গান
উপালি শ্রমণ

বদ্ধ পিঞ্জরে কপোত চঞ্চল
মুক্ত আকাশের স্বপ্নে ভরা মন,
শোনে ডিসেম্বরে স্বাধীনতার গান
করিছে উৎসব খুশীতে জনগণ।

আতশবাজি ফোটে আকাশে ধোঁয়া ওড়ে
গন্ধ বিষময় ভরিছে ফুসফুস।
ক্ষুদ্র পিঞ্জরে হলুদ তোতাটিও
শেখানো গান গায় এখানে দিল্‌ খুস।

রাত্রে জোনাকির সঙ্গে ঝিঁঝিঁপোকা
করিছে তান্ত্রিক নিয়মে প্রার্থনা,
বৃক্ষমূলে বসে মৌন মুনি ভাবে
স্বাধীনতার মানে সব কি বঞ্চনা।

হেটে সে বহুদূর অচেনা কত পথ
মনের গতিবিধি করে নিয়ন্ত্রিত,
খুঁজছে দেহ তবু প্রাপ্য মূল্যটি
এখনো মুক্তির মেলেনি ইঙ্গিতও।

এখনো আছ তুমি

এখনো তুমি আছো
উপালি শ্রমণ

এখনো ঘরে ঘরে তুমি অলংকার
পাহাড়ে পর্বতে মূর্তি শোভা পায়,
কারো’বা গৃহ কোণে নিরব ছবি হয়ে
তুমিও থাক নিজ শান্ত সাধনায়।

তোমার নামে হয় দালান উঁচু উঁচু
নিরন্তর কতো ভক্ত গান গায়,
এখনো অনেকেই শুদ্ধ চিত্তেই
দীক্ষা নেয় শুভ মুক্তি কামনায়।

ত্রস্ত পথিকের শরণে তব নাম
তোমার নামে করে কেউ’বা শুভকাজ,
কেউ’বা স্বেচ্ছায় মুখ ফিরিয়ে নেয়
অন্যদিকে চায়, তোমার নামে লাজ।

এমনও আছে কেউ অন্ধ ভাবাবেগে
তোমার নামে করে হত্যা নাশকতা,
আমি তো চিরকাল রয়েছি দিশাহারা
হারিয়ে নিজেকেই, তোমাকে পাবো কোথা?

শূন্যতার গান

শূন্যতার গান
উপালি শ্রমণ

উড়ছে পাখি দূর আকাশে নীলিমায়
ওড়ে বিরতিহীন অচিন ঠিকানায়,
বাসা তো গাছে তবু শূন্যে ঘর খোঁজে
ক্লান্ত পাখা তার তবু সে উড়ে যায়।

শূন্য চারিদিকে ভরা জগতময়
তবুও পাখি তোর সাধনা শূন্যের,
পৃথিবী দূর ঠেলে আকাশে আশ্রয়
অবোধ পাখি খোঁজে কি সেই পুণ্যের?

কেমন বিশ্বাসে ভোলে সে নদী জল
ভুলেছে কি যে মায়া পাহাড়ি ঝর্ণায়,
ভোরের কুয়াশায় রুদ্র ঝলোমল
শিউলি ঘ্রাণ ভুলে তবু সে উড়ে যায়।

তবু সে উড়ে যায় সুদূর নীলিমায়
মৃত্তিকায় আজ কিসের অভিমানে?
মেঘের গর্জন রোদের তীব্রতা
তুচ্ছ সবই তার শূন্যতার গানে।

জগত-গুরু

জগত-গুরু
উপালি শ্রমণ

তোমার পাশে নয় সম্মুখেও নয়
পেছনে কিংবা সে উপর নীচে নয়,
হয়তো সবখানে রয়েছে একসাথে
বুঝবে অনুভবে সারা জগত্ময়।

ছিল সে অতীতেও, থাকবে অনাগতে
বর্তমানে আছে, আসলে কালহীন,
কতো যে গ্রহলোকে ঘোরে সে এক ক্ষণে
আমি ও তুমি তাঁর প্রেমেই সমাসীন।

যতই তাঁর খোঁজে হয়েছ হয়রান
ততো সে দূরে রয়, এমন খেলা তাঁর,
ছেড়েছ হাল যদি, ডুবিয়া হতাশায়
তখন পুনরায় ডাকবে সে আবার।

ক্লান্ত দেহ মনে যখন ঘুমঘোরে
করবে ত্যাগ তাঁর সকল প্রত্যাশা,
একটি কুয়াশার ফোঁটায় খুব ভোরে
জেগেই পাবে তাঁর বিপুল ভালবাসা।

অগ্নি পদ্য

অগ্নি-পদ্য
উপালি-শ্রমণ

জ্বলছে চোখ কান জিহ্বা নাসিকাও
জ্বলছে দেহ মন জ্বলে নিরন্তর,
দূরের হিমালয় যতই জল দেয়
দ্বিগুণ হয়ে জ্বলে ধরণী অম্বর।

বুঝি না কে যোগায় এতো যে ইন্ধন
নিত্য জ্বলে তবু হয় না শেষ তার,
তীব্র দহনের চরম নিপীড়ণ
সহ্য করে পথ হাঁটছি অনিবার।

উপড়ে সূর্যের রোদ যে প্রতিদিন
তীব্র থেকে আরো তীব্রতরো হয়,
নীচের বোধি গাছ জ্বলে বি-রতিহীন
হবে কি কৈলাস গলিত হিমালয়?

তবুও পিকিলিকা পাখার উৎসবে
আলোক কাছে পেতে আগুনে দেবে ঝাপ,
মেঘের পথ চেয়ে চাতক বসে রবে
অগ্নি সাগরেই জ্বলবে আদি পাপ…

আগুনে জ্বলে সব

আগুনে জ্বলে সব
উপালি শ্রমণ

তীব্র উত্তাপে আগুন জ্বলে বনে
প্রতিটি নিঃশ্বাসে বাষ্প অঙ্গার,
খাদ্যে ভস্মের টুকরো গণগণে
রাত্রে ঘুম হয় অগ্নি বিছানার।

আগুন খাই আমি আগুনে করি বাস
অবিচী নরকের কি আর প্রয়োজন?
রুগ্ন পৃথিবীর হচ্ছে ধীরে নাশ
নিত্য জ্বলমান আমার দেহ মন।

এ কোন অভিশাপ হয়তো অতীতের
করেছি যত পাপ কর্ম সঞ্চিত,
বৃষ্টি ঝরে চোখে প্রায়শ্চিত্তের
কবে যে হবে ত্রাণ মেলে নি ইঙ্গিতও।

কবে শীতল হবে দগ্ধ পৃথিবীর
তপ্ত বুকে প্রাণ পাবে কি স্নেহ ছোঁয়া?
পায়রা কবে গান গাইবে মুক্তির?
বইবে ফুসফুসে আবারো তাজা হাওয়া।

সীমাঘর

সীমাঘর
উপালি শ্রমণ

পাথরে চিহ্নিত আমার সীমাঘর
দেয়ালে অংকিত প্রাচীন বিধিমালা,
সাদা ও কালো রঙে লিখিত অক্ষর
সবুজ লাল মেখে রঙিন হতে চায়।

কখনো পথ ভুলে আসছে প্রজাপতি
দু’পাখা মেলে তার রং মাখিয়ে যায়,
সেদিকে ভ্রুক্ষেপ নেই মাকড়সার
যত্নে বুনে তার জালটি দরজায়।

তবুও রয়ে যায় দেয়ালে কিছু ভুল
দ্রাক্ষা লতা ঢাকে শূন্য ফাঁকটিকে,
পাথর ভেদ করে রক্ত জবা ফুল
কিছুটা রং দেয় নীরস পৃথিবীকে।

প্রাচীন শব্দরা একে অপরকেই
পিষ্ট করে, শাদা রক্তপাত হয়,
নিজ কবিতা লেখি আমি সে রক্তেই
দেখছে ঘুণ পোকা দুচোখে বিস্ময়।

দূরের ও’পাহাড়ে

দূরের ও’পাহাড়ে
উপালি শ্রমণ

দূরের ও পাহাড়ে মাঝের নদীতীরে
নীচের গুহা-মাঝে থাকবো একরাত,
কেন যে শত ঋষি ব্যর্থ আসে ফিরে
কি আছে ও পাহাড়ে জানতে বড়ো স্বাদ।

কেমন ঘাস পাতা ঢেকেছে দেহ তার
চাঁদের আলো কেন যায় না তার বুকে,
এতোই কালো যদি এতোই ঝোপঝাড়
কোন সে মধু রসে পথিক মজে সুখে?

কখনো হয়তো’বা আলো কি বোঝা যায়
নিজের দুই হাতে কালোকে ছুঁয়ে দেখে,
হয়তো গোলাপের কাঁটাই মোক্ষম
ফুলের মায়া বুঝি কাঁটার ছোঁয়া থেকে।

তবুও যাই যদি দূরের সে পাহাড়
শুধুই একদিন তোমার কথা ভুলে,
যদি’বা করি স্নান নদীতে একবার
এতো কি ভুল হবে, নেবে না কেউ তুলে?

হয়তো একদিন

হয়তো একদিন
উপালি শ্রমণ

হয়তো একদিন তোমার দেখা পাবো
অতীব সাধারণ আমার কোন কাজে,
নদীর ধারে আমি হাঁটব সন্ধ্যায়
তোমার দেখা পাবো ঘাস পাতার মাঝে।

নাম না জানা এক পাখির গান শুনে
হয়তো হৃদয়ের উঠবে ঝংকার,
সেখানে তুমি রবে বলবে মৃদু হেসে
“হৃদয়ে পদ্ম কি ফুটেছে এইবার।”

অথবা পথে যেই বৃদ্ধ ঘর হীন
করছে বসবাস আকাশই ছাদ তার,
তাঁর দু’চোখে চোখ রেখেই দূর হবে
তৃষ্ণা মায়া সব বিষয় বাসনার।

এমনও হতে পারে নিবিড় ঘুমে আমি
নয়তো শেষদিন মৃত্যু শয্যায়,
আমার পাশে তুমি বলবে শত নামী
“ছিঁড়ে দে শৃঙ্খল” পরম মমতায়।